Saturday, February 28, 2015

পাগলের প্রলাপ, ভেজাবেড়াল ও সরল সুশীলের গল্প by সাজেদুল চৌধুরী রুবেল, অতিথি লেখক বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

 

 রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট নন এমন এক ব্যক্তি সেদিন আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, “খবর শুনেছেন?” আমার জিজ্ঞাসাঃ “কিসের খবর, কোন খবরের কথা বলছেন?” একটু উঁচু আওয়াজ তার। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিনের বিবৃতিটি পড়েননি? ব্যাটা নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা আবিষ্কারের যে ঘোষণা দিয়েছেন তা কি আপনার নজরে আসেনি? এবার বুঝলাম। সরকার বিরোধী আন্দোলনে যারা হতাহত হচ্ছে তাদেরকে এ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি এবং নিহতদেরকে জাতীয় বীরের মর্যাদা, ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের কথা জানিয়ে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি পাঠিয়েছেন তার কথাই তিনি বলতে চেয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধার আভিধানিক অর্থ বা সংজ্ঞাটা কি? আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সালাউদ্দিনকে মুক্তিযোদ্ধার সবকটি দিতে হলে একটু অতীতে ফিরে যেতে হয়। শোষিত, নির্যাতিত ও অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালি জাতি দেশকে স্বাধীন ও মুক্ত করার জন্য পাকিদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে যে সংগ্রামী যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল তাই বস্তুত মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে খ্যাত। দেশকে বাঁচানোর এ মহান যুদ্ধে যেসব সৌভাগ্যবান দেশপ্রেমিক লোকেরা স্বেচ্ছায় ঝাপিয়ে পড়েছিলেন মূলত তারাই হলেন আমাদের দেশের সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধা। আর পাকিদের হয়ে যারা এ দেশের বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধ ও যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কাজ করেছিলো তারা হচ্ছে এ দেশের ঘৃণিত রাজাকার। সরকার বিরোধী আন্দোলনের নামে এসব পশুসম রাজাকারদের সাথে হাত মিলিয়ে বিএনপি জঙ্গি কায়দায় পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে ছুঁড়ে যেসব সাধারণ মানুষকে হতাহত করছে তাদেরকে তারাই “মুক্তিযোদ্ধা” খেতাবে ভূষিত করে জাতীয় বীরের মর্যাদা দেওয়ার নির্লজ্জ ঘোষণা দিয়েছে। এর অর্থ কি? একি মহান মুক্তিযুদ্ধ ও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিহাস করার মতো ধৃষ্টতা নয়? মুক্তিযুদ্ধকে খাট বা হেয় প্রতিপন্ন করা নয়? বিএনপির মতো একটি দলের যুগ্মমহাসচিব পদধারী কোন ব্যক্তি প্রকাশ্যে গণমাধ্যেম যখন এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন বিবৃতি দেন তখন তাকে “পাগলের প্রলাপই” বলতে হয় বৈকি। মান্নার ফোনালাপের বেরসিক খবরটি যেদিন সর্বত্র ঝড় তোলে সেদিন সারাবেলা ব্যক্তিগত ব্যস্ততায় কাটে। রাতে ওই একই ভদ্রলোককে ফোন দিয়ে এ ব্যপারে আলোচনা করতে চাইলে তিনি বলেন, “আরে সাহেব, ওই ভেজাবেড়ালটার ফোনালাপের কাহিনী তো কেবল টক অফ দি কান্ট্রি নয় টক অফ দি বেঙ্গলি কমিউনিটি ইন দ্য ওয়ার্ল্ডে পরিণত হয়েছে।” এ কথা শুনে অনলাইনে গিয়ে বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল, পত্রিকা ও সামাজিক মাধ্যম গুলোতে যখন চোখ বুলাতে থাকলাম তখন সত্যি তার কথার সত্যতা উপলব্ধি করি। শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশকে যে ডিজিটাল দেশে পরিণত করতে পেরেছে এ কথা তার সমালোচকরাও স্বীকার করতে বাধ্য। রিক্সাচালক, শ্রমিক শ্রেণীর লোক থেকে শুরু করে গ্রামে গঞ্জে কৃষক ও রাখাল বালকরাও মোবাইল ফোনে আজকাল ফেসবুক ব্যবহার করতে শিখেছে। দশ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশের মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক। যে যুগে হোয়াইট হাউজে বসে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিন লাদেনের মৃত্যুর দৃশ্য সরাসরি দেখতে সক্ষম হয় সে যুগে রাষ্ট্রদ্রোহী মূলক কোন টেলি কথোপকথন ফাঁস করার মতো প্রযুক্তি যে বাংলাদেশ সরকারের রয়েছে তা অন্তত মান্না সাহেবের মতো চৌকস, দূরদর্শী ও ধূর্ত ব্যক্তির মাথায় উঁকি দেয়া উচিৎ ছিল। মান্নার ফোনালাপ থেকে তার আসল স্বরূপ বেরিয়ে এসেছে। নাগরিক ঐক্যের পোশাক পড়ে সুশীল সুশীল বলে চেঁচামেচি করলেও তিনি যে মূলত জঙ্গিবাদের একজন এজেন্ট হিসেবে কাজ করছিলেন তা এখন দিনের আলোর মতো পরিস্কার হয়ে গিয়েছে। খবরে দেখেছি, পুলিশ তাকে রিমান্ডে নিয়েছে। সময়োপযোগী এ রিমান্ডের মাধ্যমে থলের বেড়ালদের অনেকের নাম বেরিয়ে আসতে পারে বলেও আমার বিশ্বাস। সুশীলের তকমা লাগিয়ে যারা সরকারকে নসিহত করেন, জাতিকে বড়ো বড়ো বুলি শুনান, শুদ্ধ জীবনের কথা বলেন, দূরদর্শনে নিজেদের পাণ্ডিত্য জাহির করেন তারা কি করে মান্নার মতোদের আশকারা দিয়ে মাথায় তোলেন? মান্না যে গোপনে গোপনে রাষ্ট্রদ্রোহি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে তা কি তারা মোটেও ঠাহর করতে পারেননি? তথাকথিত সুশীলরা কি এতোটাই সহজ সরল যে মান্না স্বীয় ফায়দা লুঠার জন্য কেবল তাদেরকে দাবার গুঁটির মতো ব্যবহারই করেছে?

Related Post:

  • 0Blogger Comment
  • Facebook Comment

Post a Comment