জনাব মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ধন্যবাদ। নিজেই প্রকাশ করে থাকুন বা অন্য কেউ– ফাঁস হওয়া তার কথোপকথন ষড়যন্ত্রের রাজনীতির অনেক জটিলতা পরিস্কার করতে সাহায্য করেছে। অনলাইন পত্রিকা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরে ডটকমের কল্যাণে মনোযোগ দিয়ে মান্নার দুটো কথোপকথন স্বকর্ণে শুনেছি এবং তার লিখিত পাঠটিও পড়ে দেখেছি।
একটি কথোপকথন বর্তমানে আমেরিকায় অবস্থানকারী বিএনপি নেতা জনাব সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে। এক/এগারোর সেনাচালিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খোকা রাজনীতির সঙ্গে তার আজীবন ছেদের প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে সময় ও পরে এটা ব্যাপকভাবে আলোচিত ছিল যে, ঢাকার প্রাক্তন মেয়র ও বিএনপির এই নেতা দুর্নীতির মাধ্যমে বিত্তের পাহাড় গড়েছিলেন। এই বিত্তের কিছু অংশ সে সময়কার ক্ষমতাবান সেনা অফিসারদের উৎকোচ হিসেবে দিয়ে এবং তার সঙ্গে রাজনীতি ছাড়ার মুচলেকা দিয়ে তিনি নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছিলেন।সেই খোকা গত আট মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন। প্রায় সাত বছর ধরে লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার অবস্থানও খোকার মতোই। তিনিও সেনা-শাসকদের মুচলেকা দিয়েই তার অবৈধ সম্পদসহ বিদেশে পাড়ি দেওয়ার সুযোগটি পেয়েছিলেন। এ কথাও বহুল প্রচলিত যে, তার দুর্নীতির একটি অংশ হাতিয়ে নিয়েছিলেন সে সময়কার বেসামরিক সরকারের পেছনের ক্ষমতাবান সেনাশাসকেরা।
এ প্রসঙ্গে একান্ত ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতার কথা এখানে বলে নিই। ২০০৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষের পর চোখ বেঁধে আমাকে ডিজিএফআই সেইফ হোলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা সেনা অফিসাররা।
‘‘স্যার, আপনার আগে অনেক মহারথীরা এই চেয়ারে বসেছেন, যুবরাজ তারেকও বসেছেন। সবাই কোঅপারেট করেছেন। শোনেন স্যার, তারেককে ফুলের টোকাটিও দিতে হয়নি। তিন দিন ধরে তার কান্না থামেনি। তিনি কোঅপারেট করেছেন, দেশে-বিদেশে তার সম্পদের সকল খবর আমাদের দিয়েছেন।’’
তো, এই তারেক জিয়া এবং সাদেক হোসেন খোকা গ্লোবাল রাজনীতির দুটো গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, যথাক্রমে লন্ডন ও আমেরিকায় অবস্থান করে বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। সরকার পতনের লক্ষ্যে নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন। খোকা দিনক্ষণ বেঁধে দিয়েছেন সরকার পতনের। তারেকের নির্দেশনায় পেট্রোল বোমা ও আরও ভয়াবহ অস্ত্রের সন্ত্রাস অব্যাহত আছে। আইএস জঙ্গিসহ নানা জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তারেকের যোগাযোগ নানা মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
তবে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, এসব কিছু জানার পরও খোকার সঙ্গে সুশীল সমাজের চৌকস মুখপাত্র মান্নার দীর্ঘ ফোনালাপ। তারেকের সঙ্গেও হয়তো তাঁর এমন ফোনালাপ কোনো একদিন প্রকাশিত হলে হতেও পারে। ফাঁস হওয়া ফোনালাপ সম্পর্কে বলব এবং ভূমিকা কেন দীর্ঘ হল, তার আন্তঃসম্পর্কটিও তা থেকে স্পষ্ট হবে।
মান্নার দ্বিতীয় ফোনালাপটি হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানকারী অজ্ঞাত এক ব্যক্তির সঙ্গে।
এই ফোনালাপও মারাত্মক। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরে ডটকম শিরোনাম করেছে, ‘ফাঁস কথোপকথন: জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠকে আগ্রহী মান্না।’ খোকার সঙ্গে কথোপকথনের মূল বিষয়গুলো বলার পর এ বিষয়ে বলব।
খোকাকে ফোনটি করেছেন মান্না নিজেই। ‘ওদিকের খবর-টবর… টুকু ভাইর সাথে কথা’ এসব জানিয়েছেন। খোকাও বলেছেন, তিনি তা জানেন। ফোনালাপে বোঝা গেল তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ আছে।
সোহরাওয়ার্দী মাঠে মান্নার প্রোগ্রামে খোকা কিছু কর্মী পাঠিয়েছিলেন বলে জানা গেল। সে কথা উল্লেখ করে মান্না তাঁর ঘোষিত ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখের মিছিলের জন্য খোকার কাছে ‘দুটো সাপোর্ট’ চাইলেন। একটি দূরে থেকেও খোকা যে সাহায্য (‘যেটুকু কিছু একটা ‘ইয়ে’ করেছেন, আমার উপকার হয়েছে’) করেছেন, তা যেন অব্যাহত থাকে। কারণ, ‘ব্যাপক পাবলিসিটি ও কমিটেড লোক আনতে হবে’। বিত্তের পাহাড় গড়া খোকার সঙ্গে এ ‘দুটো’র সঙ্গে ‘ইয়ে’র সংযোগটি যে কী, তা আক্কেলমন্দ মানুষের বুঝতে অসুবিধা হবে না।
‘একটা নিউট্রাল পজিশনে’, তার মিছিলে, তার ভাষায়, ‘১০ হাজার লোকের সমাগম ঘটাতে’ খোকার সাহায্য। কেন? ‘ব্যানার যাই হোক না কেন, ব্যানারের ভেতরে অন্তত বিরোধী আন্দোলনকে কোন সমালোচনা করা হচ্ছে না।’
ফোনালাপের একেবারে শুরু থেকে কুটনীতিকরা যে ‘যথেষ্ট পরিমাণে ইনিশিয়েটিভ নিচ্ছেন’, ‘প্রতিবেশিদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন হচ্ছে’– এসব মান্না জানিয়েছেন খোকাকে। স্পষ্টতই বোঝা যায়, এসব উদ্যোগে মান্না খুবই গুরুত্ব দিচ্ছেন; কারণ, পশ্চিমা উদ্যোগের সঙ্গে ‘যদি ইন্ডিয়ানদের একটা যোগশাজস হয়, তাহলে এইখানে একটা চেঞ্জের বাতাস বয়ে যাবে।’ তাই মান্নার অভিমত, ‘সালাউদ্দিন সাহেবের যে স্টেটমেন্ট যাচ্ছে, দিজ আর ফাইন। খুবই সুন্দর স্টেটমেন্ট যাচ্ছে।’ মান্না, অভয় দিচ্ছেন খোকাকে, ভেঙে পড়া যাবে না। বলছেন, ‘যদি একটা দুইটা বড় প্রোগ্রাম করে ফেলতে পারি, তাহলে ব্রেক থ্রু হয়ে যাবে। আপনারা তখন পেছনে পেছনে নিজেদের মতোই নামতেই পারবেন। নামতে পারলেই কেইস শেষ।’
মান্নার আর্জি, ‘পাবলিকের কিলিংয়ের ঘটনা অ্যাভয়েড করতে হবে।’ বলছেন, ‘গত চার-পাঁচ দিনে পেট্রোল বোমায় মৃত্যুর ঘটনা কিন্তু নেই এখন আর। এটা ভালো।’
উত্তরে খোকা বলেছেন, ‘সেটাও গভর্মেন্টের অপপ্রচার। তারা বলবে, আমরা কট্রোল করে ফেলেছি। সব ঠিক হয়ে গেছে।’
অর্থ দাঁড়াল, পেট্রোল বোমায় পাবলিক কিলিং খোকা সাহেবরা যে পরিকল্পিতভাবে করছেন, মান্নারও তা জানা।
খোকা যেখানে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করছেন; বলছেন, ‘ওরা তো অ্যাগজস্টেড হয়ে যাচ্ছে। এখন এটা কতদিন কনটিনিউ করা যাবে। আবার না করেও তো কোনো উপায় নেই’– সেখানে মান্না বলছেন, ‘আরও কিছুদিন তো কনটিনিউ করতেই হবে।’
ভয়াবহ আরও কথা বলেছেন মান্না। খোকাকে জানাচ্ছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে ধরতে হবে অ্যাট অ্যানি কস্ট। … আমি তিন মাস আগে … কে বলেছিলাম, যে কোনো ভাবে ইউনিভার্সিটিতে দুই তিনটি হল দখল করেন।’ ‘ইউনিভার্সিটিতে ধরেন মারামারিতে গেল দুই তিনটা। কী করা যাবে? কিন্তু আপনারা গভর্মেন্টকে শেইক করে ফেলবেন।’
সেটাই ভয়াবহ কথা। সুশীল সমাজের মাথা, বিনয়ী, প্রজ্ঞাবান মান্না যিনি টকশোতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বলেন, আগুনে পুড়ে মরে যাওয়া মানুষের জন্য আহাজারিও করেন, তিনি বলছেন, দুই তিনটা লাশ পড়লে ‘কী করা’, সরকারকে তো ঝাঁকুনি দেওয়া যাবে!
আরও গুরুতর কথা বলেন তিনি খোকাকে। খোকা যখন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে হল দখলের চেষ্টা হলে ‘বড় ধরনের একটা ইয়ে হয়ে যাবে’– তখন মান্না বলেন, ‘একটা বড় ধরনের কিছু হলেই ঘটনা পাল্টে যাবে। গভর্মেন্ট সুতার উপর ঝুলছে।’ এ প্রসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির কথা বলেছেন, ‘আমি জানি না, কেরির সঙ্গে ওখানে কী কথা হচ্ছে বা হবে। দ্যাট উইল বি ভেরি ভাইটাল।’
এককালের বাম ছাত্রনেতা, পরে জাসদ, বাসদ ও অন্যান্য দল হয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমানে নাগরিক ঐক্যের প্রধান গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী মান্না আমেরিকার হস্তক্ষেপে বড় কিছু একটা ঘটবার জন্য অপেক্ষা করছেন। যেমনটা করছেন, বেগম খালেদা জিয়া-তারেক জিয়া-খোকা এবং জামাত।
বান কি-মুনের চিঠির বিষয়ে ‘প্রথম আলো’র সম্পাদক মতিউর রহমান যে পূর্ব থেকেই জানতেন সে বিষয়ে বলেছেন মান্না, ‘মানে মতি ভাই জানতেন বান কি-মুন এই রকম বলছে। তার আগে হয়তো ড. কামালও জানতেন।’
ম্যাডাম খালেদা জিয়াকে মান্না তার সালাম পৌছে দিতে বলেছেন। খোকাকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে উৎসাহ দেওয়ার পর মান্না তার জোটের শরিকদের নিয়েও কথা বলেছেন।
‘এখন আমাদের নামা দরকার। আমাদের বলতে… সিপিবি বা ওদের পজিশন কিন্তু বেশ ফেসিনেটিং। অনেকটা ঐদিকে আর খানিকটা এইদিকে এই রকম। তার মানে আমরা যে ক’জন আছি, এই কয়জনই। তার মধ্যে আবার দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আছে। কিন্তু এখানে কাউকে টানতে হবে।’
পরে খোকাই বলেছেন, তারা মান্নার প্রোগ্রামে তাদের কর্মীদের পাঠিয়েছিলেন। কথা দাঁড়াল, সিপিবি বা বাসদকে নিয়ে মান্না ভরসা পাচ্ছেন না। তারা দোদুল্যমান। অন্যরা (ড. কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকী, ডা: বদরুদ্দোজা, আসম রব) দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। তাই তার প্রোগ্রামে কমিটেড লোক পাঠাতে হবে খোকাদের। কে না জানে এই কমিটেডরা হচ্ছে জামাত-বিএনপির জঙ্গি সন্ত্রাসী খুনিরা।
ভাইবারে ফোন করলে তা যে নিরাপদ এ বিষয়টা মান্না জানেন, তা বোঝা গেল কথোপকথনে। ‘নিউ এজ’ সম্পাদক নূরুল কবির, অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদের নাম মান্না উল্লেখ করেছেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগের প্রসঙ্গে। বলেছেন প্রয়াত অলি আহাদের কন্যা ও আরও কয়েকজনের কথা। যাদের বিএনপির হয়ে টকশোর জন্য তৈরি করতে হবে। কারণ ‘টকশোতে এইজন্য তো মানুষ নাই এখন।’
বেগম খালেদা জিয়ার অফিসে ড. কামাল হোসেনকে তিনি ‘পারসু’ করে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানান মান্না। খোকার জিজ্ঞাসায় মান্না জানান, আবার খালেদা জিয়ার বাসায় যেতে ড. কামাল রাজি হবেন না।
অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানকারী অজ্ঞাত ব্যক্তি যে অসাংবিধানিক পথে ক্ষমতা পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, মান্নার সঙ্গে ফোনালাপে তা স্পষ্ট হয়। রহস্যময় ব্যক্তিই ফোন করেন মান্নাকে। ‘ভাইয়া আমার সমন্ধে তো নাম-বদনাম অনেক কিছু শুনেছেন। আপনি আমাকে ট্রাস্ট করেছেন। আই লাইক টু থ্যাংক ইউ ফর দ্যাট।’ অজ্ঞাত ব্যক্তির এই কথায় মান্না যে তার সঙ্গে শুধু যোগাযোগই রাখেন না, নাম-বদনাম থাকলেও তাকে বিশ্বাসও করেন তা বোঝা গেল। এই ফোনালাপের একেবারে শুরুতেই মান্না নিশ্চিত হয়ে নেন কলকারি ভাইবারেই আছেন।
অজ্ঞাত ব্যক্তির ‘বাট ওই যে, ওইদিকে উত্তরপাড়া কিন্তু গরম হচ্ছে’, এই কথার উত্তরে মান্না বলেন,
‘আর কী গরম, আর কবে হবে? যা হয়ে গেছে দেশে এর থেকে বেশি কিছু তো আর হতে পারবে না।’
পেট্রোল বোমায় মানুষ হত্যা, ট্রেন ফেলে দেওয়া, জনগণ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অব্যাহত সন্ত্রাসের কথাই নিশ্চয়ই মান্না বলছেন।
‘সাপোর্টটা ছিল না যে’, কলকারির এই কথার উত্তরে মান্না বলেন, ‘না… এখন তো আছে।’ এরপর উত্তরপাড়ার সঙ্গে যোগাযোগের কথা আসে।
অজ্ঞাত ব্যক্তি বলেন, ‘দেশে পরিবর্তন আনতে চাইলে, আপনার কথা বলা দরকার। উনারাই আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।’ মান্না তাতে সম্মতি জানান।
অজ্ঞাত ব্যক্তি জানান, রিটায়ার্ড একজন মান্নাকে ফোন করবেন, সঙ্গে থাকবেন কর্মরত দুইজন। তাদের একজন লে. জেনারেল হতে যাচ্ছেন; অপরজন ইতোমধ্যেই লে. জেনারেল। মান্নার প্রশ্ন, ‘তুমি যার কথা বললে, উনি কি তোমার ওই এলাকার দিকে ছিলেন?’ উত্তরে কলকারি নিশ্চিত করেন, তিনি অস্ট্রেলিয়াতেই ছিলেন। এক/এগারোর অন্যতম নায়ক জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী পরে অস্ট্রেলিয়াতে রাষ্ট্রদূত হয়ে যান। তিনিই কি কলকারি বর্ণিত রিটায়ার্ড একজন?
অজ্ঞাত ব্যক্তি বলছেন, ‘প্রয়োজনে ওনারা ওখান থেকে আপনার সাথে চিফের কথা বলিয়ে দেবে।’ মান্না তাতে সম্মতি জানান।
‘ওয়ান ইলেভেনে গতবারে একটা পর্যন্ত ব্যারাক থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে, আমরা সাহায্য করেছিলাম। বাট রুমী ভাই… মঈন সাহেবের মধ্যে একটা ডিফারেন্স হয়ে গেল।’ কলকারি আরও বলছেন, ওই সময় তিনি অসুস্থ হয়ে না পড়লে, ‘আমার এসব ঘটনাতে আপনার গেমটা অন্য দিকে চলে গেল। বাট ইট উড বি আ ডিফরেন্ট স্টোরি অল টুগেদার।’
মারাত্মক কথা। এক/এগারোর ষড়যন্ত্রে মান্নার সংযুক্তি একেবারে খোলা হয়ে যায় কলকারির কথায়। কলকারি জানান, ‘টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, পাহাড় থেকে নিয়ে সব জায়গায় কাজ করেছি। …তখন আমি ৪০-৫০টা এমপি দিয়ে অনেক কিছু ম্যানিপুলেট করছি। আমি তাদের নমিনেশন থেকে নিয়ে সব ব্যবস্থা করেছি।’
জেনারেলদের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারে অজ্ঞাত ব্যক্তি বলেন, ‘এখন ইনশাআল্লাহ রানিং ১৯ জনের মধ্যে ১২ জনের সঙ্গে আমি সরাসরি কথা বলি। অ্যাটলিস্ট ইউ ক্যান টক টু দেম। আপনি কথা বললে ক্লিয়ার হবে।’ মান্না বলেন, ‘ওকে’।
‘ইউ উইল রিসিভ আ কল বাই টুমোরো টুয়েলভ।’ একটা রেস্টুরেন্ট বা কোনো গোপন জায়গায় কথা বলার পরামর্শ দেন কলকারি। অস্ট্রেলিয়ার একটি ভাইবার নম্বর থেকে কথা হবে বলে জানালে মান্না তাতে সম্মতি দেন।
পাশের দেশের সঙ্গে মান্নার যোগাযোগের সূত্র ধরে অগ্রগতি জানতে চান কলকারি।
উপরে উল্লিখিত দুটো ফোনালাপ যা মান্না অস্বীকার করেননি, করতেও পারবেন না– তা কী বলে? ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ তারিখে অনুষ্ঠিত একুশের আলোচনা সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি নেত্রী মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে উত্তরপাড়া ও বিদেশি প্রভুদের দিকে চেয়ে থাকেন।’ একই কথা যে মাহমুদুর রহমান মান্নার ক্ষেত্রেও সর্বাংশে প্রযোজ্য তা বড় স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে ফাঁস হওয়া ফোনালাপে।
কেন শুরুতে মান্নাকে একটি ধন্যবাদ দিয়েছি, তা এবার বলি।
কিছু মনে করবেন না মান্না, ‘চোরের দশদিন তো গৃহস্থের একদিন’, প্রবাদটি শক্ত হলেও আপনার জন্য তা শতভাগ সত্য। লম্বা সময় ধরে একজন সজ্জ্বন, উদার, গণতন্ত্রকামী ও দেশের মঙ্গল-প্রত্যাশী সুশীল রাজনীতিবিদের মুখোশ পরা আপনার চাকচিক্যময় আবরণ একেবারে খসে পড়েছে। আপনাকে চেনাতে সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ তো আপনার প্রাপ্য।
দেশের সত্যিকার গণতন্ত্রকামী মানুষ, তরুণ প্রজন্ম এবং মান্নার জোটের সিপিবি-বাসদ, ড. কামাল হোসেন ও অন্যরা ভেবে দেখবেন, এমন একজনের সঙ্গে রাজনীতি করা নিরাপদ কিনা। অজ্ঞাত ‘ইমপোস্টার’ যার উপর মান্নার গভীর আস্থা– তার কথা সত্য হলে উত্তরপাড়ার জেনারেল সাহেবরাও সাবধান হবেন নিশ্চয়ই। কারণ বাংলাদেশে অসাংবিধানিক পথে ক্ষমতা দখলের দুঃস্বপ্ন আর কেউ দেখবেন বলে মনে হয় না। আমরা ছাত্র-শিক্ষক-জনতা ২০০৭ সালেই তা নিশ্চিত করেছি।
বাংলাদেশ পাকিস্তান বা আফগানিস্তান হবে না। বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত অবরোধ-হরতালে অব্যাহত হত্যা-সন্ত্রাস দু’মাসের কাছাকাছি হওয়ার পরও দেশ অচল হয়নি, মান্না গংদের অব্যাহত ষড়যন্ত্র ও প্রচারণার পরও। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর হবে; খালেদা-তারেক-জামায়াত চক্র নির্ধারকভাবে পরাজিত হবে। যেমন পরাজিত হবেন মান্নার মতো ছদ্মবেশী সুশীলেরা। তার মধ্য দিয়ে কার্যকর ও প্রয়োজনীয় সংলাপের ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অর্জন সংবিধান ও তাতে সন্নিবেশিত চার মৌল নীতির ভিত্তিতে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে রচিত হবে ‘জাতীয় সনদ’।
সে লক্ষ্যেই আগাচ্ছে দেশ। ধীরে, তবে সুনিশ্চিত পদক্ষেপে।
Post a Comment